ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ২০২৫: আপনার জানা উচিত
তারিখ: ১৭ জুন, ২০২৫
বিশ্ব আবারও উত্তেজনার মুখোমুখি, কারণ ইরান ও ইসরায়েল-এর মধ্যকার সংঘাত আরও গভীর হয়েছে। সম্প্রতি তেহরান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি ভয়াবহ হামলার মাধ্যমে এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়, যা ইরান দাবি করছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার অপারেশন।
এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রুতা, ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ধর্মীয় বিভাজন। ইরান বরাবরই ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল ইরানকে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এর ফলে দু’পক্ষই বিভিন্ন সময়ে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
⚔️ ঘটনার সূচনা
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিমান হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরান পাল্টা জবাবের ঘোষণা দিয়েছে, এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে হিজবুল্লাহ, ইরাকি ও সিরীয় মিলিশিয়াগুলো জড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরান ইতোমধ্যেই আঞ্চলিকভাবে তার মিত্রদের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চাপ বাড়াচ্ছে। হিজবুল্লাহ সীমান্ত এলাকায় সক্রিয়, ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধারা রেড সি অঞ্চলে ইসরায়েলি জাহাজ টার্গেট করছে। অন্যদিকে ইসরায়েলও তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন আয়রন ডোম, অ্যারো-২, অ্যারো-৩ এবং সাইবার ইউনিট ৮২০০'র মাধ্যমে প্রস্তুত রয়েছে।
🌍 বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্র শান্তির আহ্বান জানালেও, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো বিশেষত ফিলিস্তিনের ওপর চলমান দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে ইরানের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে।
তুরস্ক, কাতার এবং মালয়েশিয়া সরাসরি শান্তির পক্ষে অবস্থান নিলেও, আরব বিশ্বের অন্যান্য অংশ এই সংঘাতে দ্বিধাবিভক্ত। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এখনও কূটনৈতিকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
🕌 ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
অনেক ইসলামিক আলেম ও চিন্তাবিদরা বলেছেন, এই সময়ে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআনে বলা হয়েছে:
“নিশ্চয়ই তোমাদের এই দ্বীন একমাত্র দ্বীন, আর আমিই তোমাদের প্রভু। সুতরাং আমারই ইবাদত কর।”
তারা জোর দিয়ে বলেন, মুসলিম বিশ্বকে এখন ন্যায়বিচার, শান্তি ও নিরীহ মানুষের নিরাপত্তার জন্য রুখে দাঁড়াতে হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে, একটি জাতি যদি অন্য জাতিকে অবিচার করে, তবে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা বৈধ। তবে এই প্রতিরোধ মানবিক সীমার মধ্যে থেকে হতে হবে। ইসলাম কখনোই নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি সমর্থন করে না।
📈 সামনে কী অপেক্ষা করছে?
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সংঘাত শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যে সাইবার যুদ্ধ, ড্রোন হামলা ও গোপন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, যা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত শুধু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি মধ্যপ্রাচ্যের সমগ্র ভূখণ্ডকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। পেট্রোলিয়াম সরবরাহ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে একটি শক্তিশালী জোট গঠনের সম্ভাবনা আছে যা মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ রক্ষা করবে। এ জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা এবং নৈতিক নেতৃত্ব।
🕊️ শান্তির আবেদন
পরিস্থিতির অবনতি রোধে আমরা শান্তির জন্য দোয়া করি এবং সকল পক্ষের নেতাদের ধ্বংসের চেয়ে সংলাপকে অগ্রাধিকার দিতে আহ্বান জানাই। মধ্যপ্রাচ্য আরেকটি বড় যুদ্ধ সহ্য করতে পারবে না।
আমাদের সবার উচিত, সত্য ও ইনসাফের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শান্তি, ন্যায়বিচার এবং ভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।
ইনকভার্স বিডি-র সঙ্গে থাকুন — বিশ্ব পরিস্থিতির বিশ্লেষণ ও ইসলামিক দৃষ্টিকোণে আপডেট পেতে।
0 Comments